যে তিন শর্তে নির্বাচনে যাবে বিএনপি


দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি। একই সঙ্গে নির্বাচনের আগে বর্তমান সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন, নির্বাচনে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানানো হয়েছে। মূলত এই তিন শর্ত পূরণ হলেই নির্বাচনে যাবে বিএনপি।

গতকাল শুক্রবার বিকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও তাঁর মুক্তির দাবিতে হঠাৎ আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে দলটির সিনিয়র নেতারা এসব কথা ও দাবি জানান। দলীয় ব্যানারে আয়োজিত সমাবেশে অস্থায়ী মঞ্চে নেতারা বক্তব্য দেন। সমাবেশে অংশ নেয় রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের এলাকার নেতাকর্মীরা।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা খুব পরিষ্কার জানিয়ে দিচ্ছি, বাংলাদেশে নির্বাচন করতে হলে অবশ্যই এক নম্বর পূর্বশর্ত হচ্ছে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। তাঁকে কারাগারে রেখে কোনো নির্বাচন হবে না এবং এ দেশের মানুষ তা হতে দেবে না। আমরা বলছি এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, আমরা বলেছি সংসদ ভেঙে দিতে হবে এবং নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করতে হবে। নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে।’ এই দাবির ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার জন্য সব রাজনৈতিক দলসহ পেশাজীবীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

সিপিবির নেতৃত্বে বাম মোর্চা গঠনের জন্য তাদের অভিনন্দন জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি অভিনন্দন জানাতে চাই আটটি বাম রাজনৈতিক দলকে, তারা মোর্চা গঠন করেছে। জনগণের এই ইস্যুগুলোকে তারা দাবি হিসেবে সামনে নিয়ে এসেছে। একইভাবে আমি আশা করব, অন্য রাজনৈতিক দলগুলো নিজ নিজ জায়গা থেকে একত্রিত হবে, জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করবে এবং এই দুঃশাসন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য একটা জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলবে।’

মাদক অভিযানের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নিপীড়ন-গুমের ঘটনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘একটা ভয় ও ত্রাসের রাজত্ব তৈরি করেছে তারা। আপনারা দেখছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের কিভাবে দমন করা হচ্ছে। আন্দোলনকারীদের তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তাদের মিথ্যা মামলা দিয়ে রিমান্ডে নেওয়া হচ্ছে। বিদেশি দূতাবাসগুলো থেকে বলা হচ্ছে, এটা অন্যায় করা হচ্ছে। শিক্ষকরাও বেরিয়ে এসেছেন।’

স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারির মতো কোনো নির্বাচন আর এ দেশে হতে দেওয়া হবে না এবং খালেদা জিয়া ছাড়া নির্বাচন হতে দেব না।’

স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আগামীকাল (শনিবার) সরকারি দল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করবে। সরকারি খরচে সরকারি আমলারা এই জনসভার ব্যবস্থা করবেন। দেখাবেন বিশাল জনসভা। আমাদের এখানে আজকে যে জনসমাগম হয়েছে। সত্যিকার অর্থে যদি তাদের সরকারি ক্ষমতা ব্যবহার না করেন তাহলে এর চেয়ে কম লোকের সমাগম সেখানে হবে।’

স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমাদের একটাই উদ্দেশ্য—খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব এবং তাঁর নির্দেশ মতো আমরা নির্বাচনে যাব। কেউ যদি মনে করেন ফাঁকা মাঠে গোল দেবেন, সেই আশা করবেন না।’

স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বাংলাদেশের একটি দলের সঙ্গে বন্ধুত্ব মানে এ দেশের জনগণের সঙ্গে বন্ধুত্ব নয়। তাই বন্ধুত্ব করতে হলে জনগণের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে হবে। বাংলাদেশের মন্ত্রিসভা হবে এ দেশের জনগণের ভোটে, ভিনদেশি কারো সমর্থন নিয়ে নয়।

এর আগে গতকাল বিকেল পৌনে ৩টায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ট্রাকের ওপর বানানো অস্থায়ী মঞ্চ থেকে সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হয়। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে সমাবেশে আসতে থাকে বিএনপি নেতাকর্মীরা।

মহাসচিবের সভাপতিত্বে সমাবেশে দলের নেতা ড. আবদুল মঈন খান, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আমানউল্লাহ আমান, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, জয়নুল আবদিন ফারুক, রুহুল কবীর রিজভী, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কাজী আবুল বাশার, আহসানউল্লাহ হাসান, যুবদলের মোরতাজুল করীম বাদরু, নুরুল ইসলাম নয়ন, এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন, রফিকুল ইসলাম মজনু, স্বেচ্ছাসেবক দলের শফিউল বারী বাবু, আবদুর কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, শ্রমিক দলের নুরুল ইসলাম খান নাসিম, জাসাসের হেলাল খান, ছাত্রদলের রাজীব আহসান, আকরামুল হাসান, এজমল হোসেন পাইলট প্রমুখ বক্তব্য দেন।

সহপ্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলিমের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপির আবদুল আউয়াল মিন্টু, নিতাই রায় চৌধুরী, মসিউর রহমান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, আফরোজা আব্বাস, আসাদুল হাবিব দুলু, শামা ওবায়েদ, এম এ মালেক, শিরিন সুলতানা, মীর শরাফত আলী সপু, সেলিম ভূঁইয়া, আমিনুল হক, আলম, আবদুস সালাম আজাদসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।–কালের কন্ঠ